Tuesday, December 24, 2024

ফরিদপুরে ২ ভাইকে পিটিয়ে হত্যা: তপন ও অজিতকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা

আরও পড়ুন

মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান তপন এবং মেম্বার অজিত বিশ্বাসের সম্পৃক্ততার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে কেউ যদি সহায়তা করে তাহলে তাদের উপযুক্ত পুরস্কার দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় মধুখালীর ঘটনা পরবর্তী সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার এ ঘোষণা দেন।এসময় তিনি জানান, এ ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির অনুরোধের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির সময় আরো সাতদিন বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন একজন হেভিচ্যুয়াল অফেন্ডার স্বভাবগত অপরাধী। কোথায় কখন কিভাবে লুকিয়ে থাকতে হয় সেটি তিনি ভালো জানেন। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন রেখে গেছেন। এর আগে আমরা মাগুরায় তার অবস্থান সনাক্ত করি। কিন্তু যখন তাকে ধরার জন্য অভিযান চালানো হয় তখন যশোরে পালিয়ে যায়। এরপর যশোরেও তাকে ধরতে অভিযান চালানো হলেও পাওয়া যায়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপনকে এর আগে দুইবার বরখাস্ত করা হয়েছিলো।একবার ইউএনওর উপরে হামলার ঘটনায় এবং আরেকবার টিসিবির কার্ড দুর্নীতির কারণে তাকে বহিস্কার করা হয়। দুইবারই উচ্চ আদালতে আপীল করে তিনি পদ ফিরে পান।একারণে তার মধ্যে এক ধরনের বেপরোয়া মনোভাব তৈরি হয়েছে। তিনি ভেবেছিলেন, যতো অপরাধই করুক না কেনো তিনি পার পেয়ে যাবেন।

আরও পড়ুনঃ  পাঁচ ব্যাংকের ধারের টাকার গ্যারান্টি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক

ঘটনার পর ধর্মমন্ত্রীর সফরের সময়েও চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন মন্ত্রীর প্রোগ্রামে দেখা গেছে এ প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, তার দ্বৈত ভুমিকার কারণে তাকে সেভাবে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়নি। তবে যখন ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের উদ্দেশ্যে বলেন,তারা যেনো দ্রুত আত্মসমর্পণ করেন। তারা তাদের আইনগত সুবিধা নেন।

বাংলাভিশনের গুগল নিউজ ফলো করতে ক্লিক করুন
তিনি বলেন, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের গ্রেফতারে সকলের সহযোগিতা চাই। তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা সকলের সহযোগিতা চাই। কেউ যদি অন্যান্য আসামিদের অবস্থানও জানাতে পারেন তাহলে তাদের উপযুক্ত পুরস্কার দেয়া হবে।

তিনি পঞ্চপল্লীর ঘটনায় গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, এ ঘটনার পরে ফরিদপুরের সাংবাদিকেরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে এমন একটি নিউজও করে নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ফরিদপুরের সাংবাদিকদের এই আচরণে তাদের প্রশংসা করেছেন। ঘটনার পর আমাদের সাথে ওই রাতে ঘটনাস্থলেও থেকেছে। তারা প্রত্যেকটি জায়গায় উপস্থিত থেকে পুরো বিষয়টি যথাযথভাবে উপস্থাপন করায় এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে বিষবাষ্প ছড়ানোর আশঙ্কা ছিলো সেই সুযোগ কেউ পায় নাই।

জেলা প্রশাসক বলেন, “এ পর্যন্ত আপনারা যথেষ্ট দ্বায়িত্বশীল আচরণ করেছেন।এটি সমগ্র ফরিদপুরের মর্যাদা রক্ষা করেছে।বাকিদিনগুলো আমরা সবাই মিলে ফরিদপুরে এই সহাবস্থান অব্যাহত রাখতে পারি সে আহ্বান জানাচ্ছি।”

আরও পড়ুনঃ  জামায়াতের বন্ধুত্বের আহ্বানে যা বলল ভারত

তিনি বলেন, যদি কেউ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার পায়তারা চালানোর চেষ্টার কোন খবর থাকে সে বিষয়ে তথ্য দেয়ার জন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি।

তবে কোন কোন মহল এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসক। তারা এটিকে হিন্দুদের হাতে মুসলিম শ্রমিকদের হত্যা হিসেবে উপস্থাপন করছেন। এটি সঠিক নয়। অনেকে নানাভাবে সহায়তা করে তাদের সহানুভূতি কুড়ানোর জন্য ভিডিও করছে এবং সেগুলো ছড়িয়ে দিয়ে ঘটনা ভিন্নভাবে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

জেলা প্রশাসক বলেন, ইসলামি দলগুলোর মতো সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচারের দাবি আমাদেরও। একটি আন্দোলনের ডাক দিলে সেখানে নানাধরণের লোক ঢুকে যায়। অবরোধের সময়েও একটি মহল সেখানে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে চালানোর চেষ্টা হয়েছে।

তিনি নিহতদের পরিবারকে ধর্মমন্ত্রী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ আর্থিক সহায়তা করা ছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তার তথ্য তুলে ধরেন এবং এ ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা ও তাদের পরিবারকে জীবিকা নির্বাহের জন্য খাদ্য সামগ্রী প্রদান ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান। তাই এ ঘটনাকে নিয়ে যাতে কোন মহল বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের অপচেষ্টা চালাতে না পারে সেজন্য সকলের সহযোগিতা চান। এ ঘটনাকে যাতে সাম্প্রদায়িক উস্কানির কাজে কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেদিকেও সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান।

আরও পড়ুনঃ  শেখ হাসিনাকে উৎখাতে পাকিস্তানের হাত আছে কি না, প্রশ্ন রাহুলের

জেলা প্রশাসক বলেন, এ ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত) মো. আলী সিদ্দিকীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তবে ঘটনার পর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তদন্ত যথাসময়ে সম্পন্ন করা যায়নি। এজন্য তারা সময় চেয়েছে। তাদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির মেয়াদ আরো সাতদিন বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। কোন বাড়িতে আক্রমণ করে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে। এজন্য আসামিরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত এবং তদন্ত রিপোর্ট না দেয়া পর্যন্ত মধুখালীতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়ন থাকবে বলেও জানান।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, ডিডিএলজি’র উপপরিচালক রওশন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াসিন কবীর, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না তাসনিম, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী সহজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ