সুদমুক্ত গাড়ি ঋণ, জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে গঠিত ইউনিটগুলোতে উচ্চ ঝুঁকি ভাতা প্রদান, মেডিকেল কলেজ ও বিভাগীয় হাসপাতালগুলোর মান উন্নয়নসহ একগুচ্ছ দাবির প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। জানা গেছে, পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪-এ সরকারের কাছে এসব দাবি তুলে ধরা হবে। এরই মধ্যে এবার বাহিনীতে রেকর্ড ৪০০ সদস্যকে পদক দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪ শুরু হচ্ছে। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। প্যারেড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ, ভাষণ দেওয়া ছাড়াও পদকপ্রাপ্তদের পদক পরিয়ে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাজারবাগে অনুষ্ঠান ছাড়াও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ থাকে। তা ছাড়া উদ্বোধনের দিনই রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচিতে তারা তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরবেন।
জানা গেছে, তাদের দাবির অনেকই পুরোনো। বাস্তবায়ন না হওয়ায় আবারও সেসব দাবি জানানো হবে। এবারও সুদমুক্ত গাড়ি ঋণের বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া পুলিশের নামে মেডিকেল কলেজ ও বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা মানোন্নয়ন, ঝুঁকি ভাতা ছাড়াও জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন ইউনিটগুলোতে দায়িত্বরতদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি ভাতার দাবি জানানো হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, বাংলাদেশি প্রবাসীরা নানা আইনি ঝামেলায় পড়ছেন। অনেকে কারাবন্দি। অনেক প্রবাসী শ্রমিক হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এসব আইনি কাজে পুলিশ অভিজ্ঞ। এজন্য দূতাবাসগুলোতে পুলিশ পদায়নের দাবি আবারও তোলা হতে পারে। আগেও এই দাবি তোলা হয়েছিল।
পুলিশ সূত্র জানায়, একটি বিভাগীয় সিটিতে ১৫ থেকে ১৬ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য কাজ করেন। মেট্রোপলিটন এলাকায় এ সংখ্যা আরও বেশি। বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ৯০ শতাংশের বেশি প্যাথলজি পরীক্ষা বাইরে করাতে হয়। তাই কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে উন্নীত করার পাশাপাশি বিভাগীয় চিকিৎসা সুবিধার বিষয়টি এবার প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। একাধিক জেলার পুলিশ সুপার কালবেলাকে বলেন, উপসচিব বা সমমানের কর্মকর্তাসহ তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা সুদমুক্ত গাড়ি ঋণ সুবিধা পান। কিন্তু পুলিশের এসপি ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই সুদমুক্ত গাড়ি ঋণ দাবি করবেন। আগেও এ দাবি করা হয়েছিল।
পদকে রেকর্ড: পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে এবারই সর্বোচ্চসংখ্যক ৪০০ সদস্য পদক পাচ্ছেন। প্রতিটি পুলিশ সপ্তাহেই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদক দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পদকপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এবার অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশের ৩৫ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং ৬০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম); গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ৯৫ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা) এবং ২১০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) দেওয়া হচ্ছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ১১৭ জনকে এবং ২০২২ সালে ২৩০ জনকে বিপিএম ও পিপিএম পদক দেওয়া হয়েছিল।
সূত্র জানায়, এবারের পুলিশ সপ্তাহে ১৫০ জনকে পদক দিতে প্রাথমিক তালিকা হয়েছিল। তবে সারা দেশের পুলিশ কর্মকর্তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের সময় সহিংস কর্মকাণ্ড ও নাশকতা প্রতিরোধে তাদের ভূমিকার কথা ঊর্ধ্বতনদের কাছে তুলে ধরেন। এরপর পদকপ্রাপ্তদের তালিকা দীর্ঘ হয়।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, প্রতি পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ প্যারেড, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এসব বৈঠকে যৌক্তিক নানা দাবি তুলে ধরা হয়। এবারও তা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, এবার সুযোগ পেলে অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে পদোন্নতি জট নিরসন এবং সুপারনিউমারারি পদগুলো রেগুলার করার বিষয়েও তারা কথা বলবেন। নতুন পদ সৃষ্টি ও পদোন্নতি জট নিরসনের কিছু উপায়ও এবার তুলে ধরা হতে পারে।
জানা যায়, এবার পুলিশের নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় ও নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের জন্য সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি জট কমানোসহ দাবি সামনে আনা হতে পরে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর কালবেলাকে বলেন, আসলে দাবির কিছু নেই। স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট পুলিশ বাহিনী গড়তে যা প্রয়োজন, তাই সরকারে সামনে উপস্থাপন করা হবে। কারণ স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে পৌঁছতে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দরকার। এবারের পুলিশ সপ্তাহ ‘স্মার্ট দেশ, শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ’— স্লোগানকে ধারণ করে পালিত হবে।