যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বোধখানা গ্রামে কয়েকটি বাসাবাড়ির টিউবওয়েল, স্কুলের টিউবওয়েলসহ চায়ের দোকান ও হোটেলের ড্রামের পানিতে রাতের আধারে বিষ প্রয়োগ করেছে দৃর্বৃত্তরা। বিষ প্রয়োগকৃত পানি টের পাওয়ায় বিষাক্ত পানি পান থেকে বিরত থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে পুরো গ্রাম পানি নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে। শনিবার (২৩ মার্চ) মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানান।
গ্রামবাসীরা জানান, শনিবার মধ্যরাতে বোধখানা গ্রামের চা-দোকানদার সাইদ হোসেনের দোকানে চুরি সংঘটিত করে অজ্ঞাত চোরেরা। এরপর ওই দোকানে বোতলে রাখা কিটনাশক বিষ নিয়ে বোধখানা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের টিউবওয়েল, বোধখানা বাজারের টিউবওয়েলসহ এলাকার কয়েকটি চায়ের দোকানের চা-কেটলি, হাড়ি, হোটেলের পানির ড্রাম ও বাসাবাড়ির টিউবওয়েলের মধ্যে বিষ প্রয়োগ করে। এরপর কিটনাশক বিষে বিষাক্ত হয়ে যায় ওইসকল টিউবওয়েল, চায়ের দোকান ও হোটেলে সংরক্ষিত পানি।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওইসব টিউবওয়েলে লাল কাপড় বেঁধে বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। টিউবওয়েল থেকে সাদা রঙের পানি বের হচ্ছে। যা থেকে তীব্রভাবে ছুটছে বিষের গন্ধ।
চা-দোকানদার সাইদ হোসেন বলেন, আমার দোকানে একটা বিষের বোতলে বিষ রাখা ছিল। চোরেরা আমার দোকানে চুরি করে, আমার দোকান থেকে বিষের বোতল নিয়ে গ্রামের টিউবওয়েল, বাসাবাড়ির হাড়ি, চায়ের দোকানসহ যেখানে সেখানে বিষ প্রয়োগ করেছে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা চা-দোকানি সাবানা বেগম জানান, তিনি ভোর রাতে সেহরি খেয়ে পানি খাওয়ার জন্য টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করছিলেন। এমন সময় টিউবওয়েলের পানিতে বিষাক্ত গন্ধ তার নাকে আসে। পরে তার পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের মানুষেরা তার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দেখেন তার টিউবওয়েল থেকে বিষাক্ত পানি উঠছে। শুধু তাই নয়, এ সময় তিনি দেখেন তার চায়ের দোকানের কেটলি এবং হাড়িতেও বিষ মিশিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পরপরই পুরো গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। একে একে গ্রামবাসীর নজরে আসে অন্যান্য টিউবওয়েল, বাসা-বাড়ি, চায়ের দোকান ও হোটেলে বিষাক্ত কিটনাশক মিশ্রিত সাদা রঙের পানি। ফলে পিপাসা পেলেও পানি পান করার সাহস পাচ্ছেন না ওই গ্রামের বাসিন্দারা।
বোধখানা গ্রামের বাসিন্দা সাইফুর রহমান সাইফ বলেন, পুরো গ্রাম এখন আতঙ্কে আছে। আমাদের কাছে এ পর্যন্ত ৫-৬টি বাসা-বাড়ি, হোটেল, চায়ের দোকান ও টিউবওয়েলে বিষ প্রয়োগের খবর এসেছে। ওইসব টিউবওয়েল থেকে সাদা বিষ মিশ্রিত পানি বের হচ্ছে। আজ যদি চা-দোকানী সাবানা বেগম বুঝতে না পারতো তাহলে বোধখানা গ্রাম আজ লাশের গ্রামে পরিনত হতো।
গদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রিন্স আহমেদ বলেন, এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা মানুষ না। তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তিনি বলেন, আমি পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করেছি। তারা ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করল গেছে। পুরো গ্রামে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে পানি পানে সতর্ক করা হয়েছে। এই গ্রামে ১০ হাজার লোকের বসবাস। আল্লাহ অনেক বড় দুর্ঘটনা থেকে এ গ্রামকে রক্ষা করেছে।
ঝিকরগাছা থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ইব্রাহীম আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষ প্রয়োগের ঘটনা শোনামাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। খোঁজ খবর নিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।