ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারিনী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ও স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে যাওয়ার বিষয়টি এখনো যেন মানতে পারছেন না প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রায় তিন সপ্তাহ নিশ্চুপ থাকার পর হঠাৎ করেই সংবাদপত্রে কলাম লিখে নিজের মতামত জানিয়েছেন তিনি। এরপর থেকেই তার বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে।
সংসদ অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আউয়াল। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংবিধান স্থগিত না করেই যেভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম চলছে, তাতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন কমিশন ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়বে বলেও মন্তব্য করেছেন পতিত হাসিনার ‘দোসর’ হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তা।
এমন প্রেক্ষাপটে ‘বিপ্লবের উদ্দেশ্যসমূহকে এগিয়ে নিতে’ অসামরিক ফরমান জারি করে সংবিধান পুরোপুরি অথবা আংশিক স্থগিত করার আহ্বানও জানিয়েছেন সিইসি।
আউয়াল ২৪ আগস্ট সমকাল–এ এক নিবন্ধে সংবিধান আংশিক অথবা পুরোপুরি স্থগিত রাখার কথা বলেছেন।
‘সংস্কার-বিপ্লব ও ফরমান: সরকার ও সংবিধান’ শিরোনামে লেখা ওই কলাম লেখার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, আলোচনার জন্য কাউকে তিনি পাচ্ছেন না। তাই নির্বাচন কমিশন যে ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়েছে, সেটা পত্রিকায় লিখে জনগণকে অবহিত করাই সমীচীন বলে মনে করছেন।
এদিকে, গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে থেকেও পতিত স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে কাজ করা এবং সর্বশেষ অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে আইনি প্রশ্ন তোলায় তার পদত্যাগ ও বিচার দাবি করছেন অনেকে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর তার এ পদে বসে থাকার আর কোনো সুযোগ নেই।
দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। পরদিনই সংসদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। এমন প্রেক্ষাপটে ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। তার আগে দেশের ক্রান্তিলগ্নে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই বলে জানান সর্বোচ্চ আদালত।
স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের প্রধান হঠাৎ করে সংবিধান লঙ্ঘনের আওয়াজ তুলে কী বোঝাতে চাইছেন তা নিয়ে চলছে বিতর্ক।
ফেসবুকে মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান লিখেছেন, সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এর পত্রিকায় লেখা কলাম ‘সংস্কার, বিপ্লব ও ফরমান’ এর মাধ্যমে বর্তমান সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে মন্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল।দ্রুত সময়ের মধ্যে নিকৃষ্ট স্বৈরাচার হাসিনা শেখের লেসপেন্সার এই আউয়ালের পদত্যাগ এবং বিচার দাবী করছি।
হাসান আমান লিখেছেন, এমন দিন আইলো,,যে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বিপ্লব নিয়া নসিহত দেয়,,মধ্য প্রাচ্যের বিপ্লব কোথায় কোথায় ব্যর্থ হইছে সেই বয়ান করে। রাতের ভোটের খল নায়ক কে এম নুরুল হদা, কাজী রাকিব, হাবিবুল আউয়াল গংদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সোলাইমান মাসুম লিখেছেন, বদলে যাওয়া বাংলাদেশের বিপ্লবীরা তাকিয়ে দেখো স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পা চাটা গোলাম বিগত প্রহসনের নির্বাচনের জনক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আজ সবাইকে সংবিধানের সবক দেয় নসিহত শোনায় ! দেশের গুরত্ববহ সাংবিধানিক পোষ্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার পোষ্টে এই চাটুকার এখনো থাকে কিভাবে তা বোধগম্য নয়?