চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষা হচ্ছে। কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে জেলা সদরের ৩০টি মাদরাসার পরীক্ষার্থীরা দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে এই কেন্দ্রের পরীক্ষায় ব্যাপকহারে নকলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেন্দ্র সচিব ও শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে পরীক্ষার্থীরা নকল নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রের পরীক্ষা কক্ষ ও শৌচাগারে গিয়ে নকলের কাগজ দেখা গেছে।
তবে এসব অভিযোগকে স্রেফ প্রোপাগান্ডা বলে দাবি করেছেন মাদরাসার অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব মাওলানা মো. নূর বখত। কেন্দ্রের দুর্নাম হয় এমন প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই ওই কেন্দ্রে গিয়ে কয়েকটি কক্ষ ও শৌচাগারে নকলের টুকরা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
কেন্দ্র সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে ওই মাদরাসাসহ কুড়িগ্রাম সদরের ৩০টি মাদরাসার প্রায় ৯৩১ পরীক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এই কেন্দ্রের প্রায় প্রতিটি কক্ষে পরীক্ষার্থীরা নকলের সুবিধা নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মাদরাসার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র ও কেন্দ্রের কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানায়, পরীক্ষার দিন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষককে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব দেয়া না হলেও পরীক্ষায় অংশ নেয়া কয়েকটি মাদরাসার বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের কেন্দ্রে রাখা হয়। তারা ওই বিষয়ের বহু নির্বাচনী (নৈবিত্তিক) প্রশ্নপত্র সমাধান করে পরীক্ষা কক্ষে পৌঁছে দেন। শিক্ষকদের প্রহরায় শিক্ষার্থীরা তা দেখে দেখে উত্তরপত্র পূরণ করে। এ ছাড়াও লিখিত পরীক্ষায় বইয়ের পাতা ও ফটোকপি করা কাগজ নিয়ে পরীক্ষা দেয় শিক্ষার্থীরা। অনেক সময় এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে নকল পৌঁছে দেন দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা। পরীক্ষা চলাকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরাই পরীক্ষার্থীদের সতর্ক করেন। তখন পরিবেশ স্বাভাবিক থাকে।
মাদরাসার একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধ্যক্ষ মাওলানা মো. নূর বখতের ভাতিজা ও আলিয়া কামিল মাদরাসার একজন শিক্ষক টাকার চুক্তিতে প্রতিবছর নকল সরবরাহের কাজ করছেন। এতে অধ্যক্ষসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক জড়িত। কয়েক বছর আগে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট পরীক্ষার্থীদের নকল সরবরাহের অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষককে হাতেনাতে ধরেছিলেন। আর কখনও এমন অনৈতিক কাজ না করার শর্তে সেবার রক্ষা পেয়েছিলেন তারা। তবে এরপরও নকল সরবরাহ বন্ধ হয়নি। প্রতিবছর দাখিল পরীক্ষাসহ এই কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত যেকোনো ধরণের পরীক্ষায় হল চুক্তিসহ নানা অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছেন মাদরাসার অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা।
দাখিল পরীক্ষা চলাকালে আলিয়া কামিল মাদরাসাকেন্দ্র পরিদর্শন করে আসা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ওই মাদরাসাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা ব্যাপক নকল করার সুযোগ পাচ্ছে। বাইরে থেকে কেউ গেলেই শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। শিক্ষকরা এমন অনৈতিক কাজে সহায়তা করলে ম্যাজিস্ট্রেট গিয়েও সহজে নকল ধরতে পারবেন না।’
কেন্দ্র সচিব ও কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নূর বখত এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন নকলের যুগ শেষ হয়ে গেছে। এমনিতেই মাদরাসা নিয়ে অনেকের নেতিবাচক ধারণা। সেসব ধারণা থেকে এমন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। আপনি চাইলে নিজে যেকোনো দিন কেন্দ্রে এসে দেখতে পারেন।’
তার ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র সমাধানে সহায়তা করার অভিযোগ প্রসঙ্গে মাওলানা নূর বখত বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। ট্যাগ অফিসারসহ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এছাড়াও ইউএনও ও এসিল্যান্ড স্যার কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। নকল করা কিংবা নকলে সহায়তা করার প্রশ্নই আসে না। যারা এসব বলছেন তারা মাদরাসা ও পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইছেন।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুসফিকুল আলম হালিম বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসারসহ গোয়েন্দা সংস্থাকে অভিযোগ তদন্তের জন্য বলবো। এ ছাড়াও আগামীতে আমরা ওই কেন্দ্রে বিশেষ নজর দেব।’