চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় দেশের মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন সওদাগর।
গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে এ আহ্বান জানান তিনি। কোনো প্রকার দাঙ্গা পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় দেশবাসীকে সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন জামাল উদ্দিন সওদাগর।
তিনি জানান, আমার ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সাইফুল ছিল তৃতীয় সন্তান। আমার ছেলে নামাজি, নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির মানুষ ছিল, তাহাজ্জুদ নামাজও বাদ যেতো না। আমার ছেলে এভাবে আমার আগে চলে যাবে আমি কখনো কল্পনা করিনি। বিনা অপরাধে যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি
নিহত সাইফুলের বন্ধু মোহাম্মদ আরমান বলেন, বন্ধু আমার মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে ইন্টারমিডিয়েট পড়েন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে। সেখান থেকে লেখাপড়া শেষ করে। পরে আর্ন্তজাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি পাশ করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। অন্যান্য বন্ধুদের চেয়ে সাইফুল ছিল আলাদা। তার সামনে কোনো অন্যায় হলে সে চুপ থাকত না, তার প্রতিবাদ করত। নিয়মিত নামাজ আদায় করত। সে খুবই মিশুক ছিল। গতকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা এখনো মানতে পারছি না।
এদিকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৭ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে ঘটনার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নগরীর পাথরঘাটা মাথার পট্টি, আন্দরকিল্লা ও হাজারী গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার যৌথবাহিনীর অভিযানে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্য ৭ জন সাইফুল হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম) মো. রইছ উদ্দিন কালবেলাকে জানান, গতকালের অভিযানে আটকদের মধ্যে বাকি ২০ জনকে যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। সাইফুল হত্যায় এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে পুলিশ সদস্য আহত হওয়ায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নির্মম ও বর্বরোচিত খুনের শিকার হন এই আইনজীবী। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আদালতের অদূরে রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফ সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি)। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য। পাশাপাশি হাইকোর্টের আইনজীবীও ছিলেন তিনি।