ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের তাবলিগি আলোচনা সভায় হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ সময় আহত হন ৭ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঢাবির বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের গেটের কাছে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাফওয়ান, রেজওয়ান, রিফাত, শাহীন, সাকিব তূর্য, মাহাদী, কুতুবউদ্দিন। এদের মধ্যে শাহীন, রেজওয়ান ও সাকিবের অবস্থা গুরুতর। তারা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে নামাজ শেষে রোজার ফজিলত ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করে বের হওয়ার সময় তাদের উপর এ হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী, টাওয়ারের কর্মচারী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী জোহরের নামাজ পড়তে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে আসেন। তারা নামাজ শেষে রমজানের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাসআলা মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা করতে চাইলে বাধা দেন বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কর্মচারী সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক। এ সময় সেখানে শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম সুজন এসে তাদের মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।
এরপর শিক্ষার্থীরা মসজিদ থেকে বের হয়ে সেন্ট্রাল মসজিদের দিকে যেতে চাইলে গেটের মুখেই তাওহীদুল ইসলাম সুজন ও তার অনুসারীরা হামলা করে।
ভুক্তভোগীদের একজন আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম শহীদী বলেন, তাবলিগের বন্ধু ও বড় ভাইয়েরা মিলে রোজার আমল ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করতে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে আসি। সেখানে কর্মচারীরা আমাদের চলে যেতে বললে আমরা বের হয়ে যায়। এসময় আমরা গেটের কাছাকাছি আসতেই ৩০ থেকে ৪০ জন আমাদের উপর হামলা করে। পরে জানতে পারি— তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিল।
বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের গেটে দায়িত্বরত দারোয়ান খোকন বলেন, শিক্ষার্থীরা বাইরে বের হতে না হতেই তাদের উপর হামলা করে কিছু ছেলে। এ সময় কয়েকজনকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। প্রথমে লাঠি দিয়ে পেটানো হলেও পরে তারা সেগুলো ফেলে ছাত্রদের কিল, ঘুষি আর লাথি দিতে থাকে। এরপর কয়েকজন শিক্ষার্থী বাইরে পালিয়ে যায় আর কয়েকজন ভবনেই আশ্রয় নেয়।
ভুক্তভোগী এক ছাত্র বলেন, হামলার সময় সবাই যে যেভাবে পেরেছি পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছি। আমার বন্ধু এই ভবনেই সাবলেট থাকে, আমি তার এখানে আশ্রয় নিয়েছি। প্রথম বর্ষে পড়ি, এত খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ব বুঝতে পারিনি। তাবলিগের আলোচনা করার জন্য যদি আমাদের উপর হামলা করা হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কোথায়?
আহত শিক্ষার্থী রেজওয়ান বলেন, নামাজ শেষে বের হতেই আমাদের উপর হামলা হয়েছে। আমিসহ আরও কয়েকজন তাবলিগের বন্ধুকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়েছে। পরে কোনো উপায় না দেখে বন্ধুর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের একজনের বাসায় আশ্রয় নেই। আমার বন্ধু শাহীন আরো গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত তাওহীদুল ইসলাম সুজন বলেন, এগুলো বানোয়াট ও মিথ্যা। একটা ছবি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আমি অসুস্থ, আমার দাঁতে ব্যথা। আমি তাদের মারতে যাব কেন? তাছাড়া তখন আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আইন বিভাগের একদল জামাত-শিবিরের ছেলে সেখানে সেমিনার করতে বসেছিল। কিন্তু তারা সবাইকে তাবলীগ বলে বেড়াচ্ছে। পরে সেখানে থাকা স্থানীয়রা তাদের সেমিনার করতে নিষেধ করলে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে তর্কে জড়ায় এবং একসময় তারা স্থানীয়দের উপর হাত তোলে। এসময় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী আশপাশে থাকায় তাদের থামায়।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামাত-শিবির ও জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা বেড়েছে। তারা মসজিদকে রাজনীতির কেন্দ্র বানিয়েছে। জামাত-শিবিরের কার্যক্রম রুখতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আজ থেকে ক্যাম্পাসে আরও সক্রিয় হবো।