Monday, December 23, 2024

জীবনে রাজনীতি না করা ব্যক্তিকেও আওয়ামী লীগ ‘সাজিয়ে’ মামলা

আরও পড়ুন

ঢাকার সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ২০ জুলাই নবী নুর মোড়ল (৫২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর এলাকার নুর মোড়ল সাভারের বনপুকুরে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন।

তাকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। নিহতের স্ত্রী আকলিমা বেগম গত ৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেন। এ মামলার এজাহারভুক্ত ৯৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জুলহাস মিয়াকে (৪৬)। অথচ তিনি জীবনে কোনো রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত ছিলেন না।

মামলার এজাহারে জুলহাসকে ঢাকার সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বলা হয়েছে। মামলায় জুলহাস মিয়ার বাবার নাম ঠিক থাকলেও গ্রামের নাম উল্লেখ নেই। এখন ভাকুর্তা ইউানিয়নের মোগরাকান্দা গ্রামের ছোট ব্যবসায়ী জুলহাস মিয়া ও তার পরিবারের দুশ্চিন্তায় রাত কাটছে।

আরও পড়ুনঃ  ধানমন্ডিতে হেনস্তার শিকার সেই ব্যক্তি বললেন, আমি জীবিত আছি

এলাকাবাসীর দাবি, জীবনে কোনোদিন রাজনীতি করেননি জুলহাস মিয়া। দীর্ঘদিন ছিলেন দেশের বাইরে। এখন ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবন চালান। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। অথচ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাজিয়ে একটি কুচক্রী মহল তার নাম হত্যা মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছে।

মামলার বাদী আকলিমা বেগমও আসামিকে চেনেন না বলে তার দাবি। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘আমি বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) থানায় যাই। তবে আমি মামলায় একজনেরও নাম দিইনি। আমি তাদের চিনিও না, জানিও না। থানায় অনেক লোক ছিল।

তারা আমাকে এসে বলে স্বামী হত্যার বিচার চান না? আমি বলেছি চাই। পরে দুটি কপির মধ্যে স্বাক্ষর (সিগনেচার) করেছি। কিন্তু কারা যে এতগুলা নাম দিল, কীভাবে দিল, এসবের আমি কিছুই জানি না। আমি এতকিছু বুঝি না। আমি শুধু আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

আরও পড়ুনঃ  বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মহাসড়কে বাসচাপায় জামায়াত নেতা নিহত

মামলার আসামি জুলহাস মিয়া বলেন, ‘হয়রানির উদ্দেশ্যে এমন একটি মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছে। বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুর্ভাগ্যজনক। ওয়ার্ড কমিটির সহসভাপতি দূরের ব্যাপার, জীবনে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত ছিলাম না। ২০০১ সালে আমি দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী হই। দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেছি। সারাক্ষণ ধর্মকর্ম নিয়ে থাকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমিও নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে সর্বাত্মক সহযোগিতায় নিয়োজিত ছিলাম। যখন যেভাবে পেরেছি অর্থ সহায়তা এবং খাদ্য সহায়তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম।

আরও পড়ুনঃ  স্বামীর মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর মারা গেলেন স্ত্রীও

এত কিছুর পরও আমি মিথ্যা খুনের মামলা মাথায় নিয়ে অসহায়ের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন, দয়া করে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ যেন এভাবে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘মামলা করার সময় বাদীর সঙ্গে অনেকেই ছিল। আর বাদী নিজেই এজহারের কপিতে স্বাক্ষর করেছেন। তখন তো তিনি আসামিদের সম্পর্কে জানেন না বা চিনেন না—এমন কিছু আমাদের বলেননি। তবু আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে না, তাদের হয়রানি করা হবে না।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ