Monday, December 23, 2024

‘জয়* বাংলা’ লেখার কারণেই কি দুই যুবক খু*ন?

আরও পড়ুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শেষে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে দুই তরুণ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও চারজন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজে ঘটনাটিকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়ালে লেখার কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে। আজ বুধবার পেজটি থেকে এক পোস্টের মাধ্যমে এমনটি দাবি করে দলটি।

পোস্টে আরও বলা হয়েছে, মাসুদ ও রায়হান ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় বসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে।

এদিকে, নিহত দুইজন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী দাবি করে রক্তের শপথ নেয়ার ঘোষণা করছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদ। আজ বুধবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্রলীগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক বিভাগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা এবং নাচোল উপজেলা শাখান কর্মী রায়হান গতকাল রাতে নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেছে।

আরও পড়ুনঃ  হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: কেনিয়ার সামরিক বাহিনীর প্রধানসহ নিহত ১০

তবে স্থানীয় সূত্র জানা যায়, নিহত মাসুদ রানা নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি ফেসবুকে এক ভিডিওতে তাকে জয় বাংলা লিখতে দেখা যায়। পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে এই হামলা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

নাচোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, পূর্ববিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

এদিকে আজ বুধবার দুপুরে ওই ঘটনায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ব্রিফিং করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নাচোলের খোলসী গ্রামে পেয়ারাবাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন সালাম ও শাহীন নামের দুই ব্যক্তি। সেখানে কাজ করার সময় শাহীন গোপনে সালামের প্রস্রাব করার ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। গতকাল রাতে মল্লিকপুর গ্রামে গরুর হাটসংলগ্ন এলাকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংঘ আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখতে আসেন সালাম ও তার সঙ্গীরা।

আরও পড়ুনঃ  জানালার গ্রিলে ঝুলছিল ইডেন কলেজের ছাত্রীর মরদেহ

সেখান থেকে ফেরার পথে রাত ১১টার দিকে মল্লিকপুর বাজারে শাহীন ও তার সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করেন। এতে গুরুতর আহত হন মো. মাসুদ (২০), রায়হান (১৪), মো. সুমন (১৮), রজব আলী (১৪), মো. আরমান (১৬) ও মো. ইমন (১৫)। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মাসুদ ও রায়হান মারা যান। গুরুতর আহত সুমনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আবুল কালাম সাহিদ আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

রায়হান কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনে জড়িত থাকার বিষয়ে তার বাবা আব্দুর রহিম বলেন, আমার পাঁচ ছেলের মধ্যে সবার ছোট রায়হান। সে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। আমার ছেলে প্রতিবন্ধী। তার ঠোঁট ও তালু কাটা থাকায় ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না। তাকে ‘ক’ লিখতে বললে ‘খ’ লিখে। সে জয় বাংলা লিখবে ক্যামনে?

আরও পড়ুনঃ  সতর্ক করলো সাইবার-৭১

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছোট্ট ছেলে; আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত কী, সেটাও জানে না। তারে ছাত্রলীগের কর্মী বানাইলো কারা?’

মাসুদ রানাকে আওয়ামী লীগ নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক হিসাবে পরিচিত করলেও তা মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তার বাবা মো. এজাবুল হক, তার ছোট ভাই মো. মোস্তাকিম বাবু এবং তার চাচাত ভাই মো. সুজন।

এজাবুল হক বলেন, ‘আমার ছেলে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা তো জানতাম। আমার ছেলেটা সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে। এরপর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখার জন্য বের হয়। সেখানে কীসের গণ্ডগোলে তারে খুন করা হইলো, আমি জানি না।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ