এই দুনিয়াতে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের থাকার মত কোন জায়গাজমি নেই,ঘরবাড়ি নেই। রাস্তার পাশে বা স্টেশনেই পরে থাকে। এক বেলা খাবার জুটে তো আরেক বেলা জুটে না। তারা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে, ওগো আল্লাহ তুমি যদি আমাকে ৩ বেলা খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতা আমার আর কোন কিছু চাওয়ার ছিল না। এভাবে রাস্তায় ঘুমিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতাম।
আবার এক প্রকারের লোক আছে যারা কাজ করে তিন বেলা খাবার খায় ঠিক কিন্তু নিজের বাড়ি নেই। তাই তাদের মনের আকুতি আমাদের যদি একটা বাড়ি থাকতো। তাহলেত শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।
এমনো লোক আছে যাদের গ্রামে বাড়িঘর আছে কিন্তু ফসলের জমি নেই। তাদের মনের দু:খ যদি আমাদের অল্প জমিও থাকতো তাহলে একটু ভালোভাবে জিবন-জাপন করা যেত।
আর যাদের জমি বাড়ি সব আছে তারা আবার আশা করে, আমাদের যদি শহরে একটা বাড়ি থাকতো! তারা অনেক কষ্ট করে হলেও ২/৩ শতাংশ জায়গা কিনে একটা ছোট্ট বাসা করে। কিছুদিন পরে আবার বড় বাসা করবে এমন আশা করে।
যারা শহরে বাড়ি আছে ব্যবসা আছে, অনেক ব্যাংক ব্যালেন্স আছে, দামি গাড়ি আছে তাদের কোন চাওয়া পাওয়া নেই, এমনটি ভাবছেন তাই না ?? জি আমিও এমনি ভেবেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে স্বাক্ষাতকার নিয়ে দেখলাম তাদের আকাঙ্খা আরো বেশি, তাদের ইচ্ছে ছেলে মেয়েকে বিদেশে পড়ালেখা করাতে ইউ.এস.এ বা কানাডাতে পাঠাবে। বিদেশে চাকরি করবে, এক সময় সপরিবারে সবাই বিদেশে পারি জমাবে। উন্নত জীবন পবে!
আচ্ছা এখন একটু ভাবুনতো এই যে উপরের সবার এই আকাঙ্খা কবে পূরণ হতে পারে???
এই প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পরে না। কারণ আমরা কেউ নিজেদের জায়গাতে সূখি নই। কেউ মন থেকে খুশি হতে পরি না। আচ্ছা বলুন তো দুনিয়ার সব মানুষ যদি এক পর্যায়ের হতো তাহলে কি সব কিছু চলতো ??
ছোট্ট একটা গল্পের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করি…..
এক দেশের সরকার প্রধান চিন্তা করলো আমার দেশের বেশির ভাগ মানুষ গরিব। এই গরিব লোকদের জন্য তার খুব কষ্ট হয় । তাই সে ভাবলো এদের জন্য কি করা যায়? অনেক ভেবে সে একটি সিদ্ধান্ত নিলো তার দেশে সব গরিবদের ধনি বানিয়ে ফেলবে। তাই সে গরিবদের একটি তালিকা তৈরী করল এবং সবার ব্যাংক একাউন্ট খোলতে বললো। রাজার কথা মতো সবাই তাই করলো। কিছু দিন পর সবাই বলতে লাগলো আসলে গরিবের কেউ নাই সরকার শুধুই বলে, আমাদের জন্য কেউ কিছুই করে না। সবাই তো হতাশ…
হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে এক লোক দেখেন তার মোবাইলে একটা বার্তা এলো, দেখলো তার ব্যাংক একাউন্টে ৫০ লক্ষ টাকা আসছে। সেতো প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিল না। তাই তার প্রতিবেশিকে জানালো দেখ আমি ৫০লক্ষ টাকা পেয়েছি। সেই লোক দেখল তার মোবাইলেও ৫০ লক্ষ টাকার মেসেজ। এভাবে সবার কাছেই ৫০ লক্ষ টাকা আসলো। পরে জানা গেলো সরকার তাদের সবাইকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। বাহ এখনতো সবাই ধনি, আর কোন অভাব নাই। এখন আর কারো দু:খ নাই সবাই সুখি হয়ে গেল …………
গল্পটা এখানেই শেষ হলে ভালো হত, তাই না? কিন্তু এখানেই তো শেষ না।
কিছু দিনের মধ্যে শুরু হল সমস্যা আর সমস্যা..
দেখা দিল খাদ্যের অভাব, সবার কাছে টাকা আছে তাই কেউ কাজ করতে যায় না। ক্ষেতে ফসল হয় না। কারখানায় শ্রমিক নেই, তাই উৎপাদন হয় না। শহরের ড্রেইনগুলো ময়লার কারণে বন্ধ হয়ে গেল, পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কেউ ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে না। কারণ সবার কাছেই এখন টাকা আছে কাজ করবে কেন? এভাবেই আস্তে আস্তে দেশটা অচল অবস্থায় পরিনত হল।
এই গল্প থেকে আমরা যা বুঝতে পারি তা হলো, সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। নিজ নিজ কাজও দিয়েছেন। প্রত্যেকে তার নিজ কাজকে সম্মান করবে। পাশাপাশি অন্যকেউ সম্মানের সাথে দেখবে। আমাদের সমাজে সব স্তরের মানুষের প্রয়োজন রয়েছে। সবাইকে সম্মান করা উচিৎ।
আর সবাই নিজের স্থানে থেকেই সন্তুষ্ট থাকা দরকার। না হয় আকাঙ্খা নিয়ে মরতে হবে…
সুত্রঃ একুশে বার্তা