Monday, December 23, 2024

কী ঘটেছিল গোপালগঞ্জে

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৬ বছরের শাসনামলে নিজ এলাকায় যেতে পারেননি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার প্রায় দেড় মাস পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি।

কিন্তু পথিমধ্যেই স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় এই সভাপতির গাড়িবহরে সশস্ত্র হামলা ও ভাঙচুর চালায় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক ও প্রথম শ্রেণির আম্পায়ার শওকত আলী দিদার (৪০)সহ দু’জন নিহত হন।

নিহত অপর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বাড়ি বাগেরহাট জেলায় বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা বাপ্পী। তাকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার পথে এম্বুলেন্সেই মারা যান। এদিকে এই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন এসএম জিলানী, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না ও সময় টিভি’র সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী।

এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বহরের কমপক্ষে ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এই হামলার প্রতিবাদে শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আরও পড়ুনঃ  টেকনাফ পুলিশ অভিযানে দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাত আটক

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম লেলিনের অভিযোগ, আমরা বেদগ্রামের মোড়ে শান্তিপূর্ণ পথসভা শেষ করে এসএম জিলানীর বাবা-মায়ের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলাম।

ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছলে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, গোবরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিকরুল, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলিমুজ্জামান ও হাসান মোল্লার নেতৃত্বে আমাদের গাড়িবহরে হামলা করা হয়।

গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শরীফ রফিক উজ্জামান বলেন, তাদের গাড়িবহর সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া পৌঁছলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দুই-তিনশ’ নেতাকর্মী মাইকিং করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ সময় তারা গাড়ি ভাঙচুর ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

আরও পড়ুনঃ  সড়ক দুর্ঘটনার ভিডিও করায় সাংবাদিকের ওপর হামলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের

এতে শওকত আলী দিদার নিহত ও বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হন। আহতরা হলেন- এসএম জিলানী, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না, রাজু বিশ্বাস, মাহাবুব খান মুরাদ, লিন্টু মুন্সী,

গোপালগঞ্জের সালমান সিকদার, সুজন সিকদার, সবুজ সিকদার, ঢাকার মতিঝিল এলাকার নাসির আহমেদ মোল্লা, বাদশা মোল্লা, নিশান, হাসান, মাতুয়াইলের আলাউদ্দিনসহ ১৬ জনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ও তিনজনকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অন্যরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে এসএম জিলানী ও তার স্ত্রী রওশন আরা রত্না এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বাদশার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় ঘোনাপাড়ার আওয়ামী লীগ নেতা আলীমুজ্জামান বলেন, এসএম জিলানীর গাড়িবহর ঘোনাপাড়া অতিক্রম করার সময় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে পদদলিত করা হচ্ছিল। এটি জানিয়ে মাইকিং করা হলে স্থানীয়রা সংগঠিত হয়ে এটি প্রতিরোধ করে। তখন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুনঃ  কৃষি ব্যাংকের কক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রহরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, কেন এ ঘটনা ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে কেউ কেউ বলছেন, সেখানে ব্যানার টানাটানি নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, নিহত শওকত আলী দিদারের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্ত করতে লাশ গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে ওসি বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।

এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশের মতো গোপালগঞ্জ জেলা সদরসহ টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওদিকে নিহত শওকত আলী দিদারের জানাজা শনিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ