Monday, December 23, 2024

কী আছে সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর সুরতহাল প্রতিবেদনে

আরও পড়ুন

রাহানুমা সারাহ। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গাজী টিভির সাংবাদিক। তার দেহ ভাসছিল রাজধানীর হাতিরঝিলে। এ দৃশ্য দেখে, ঝিলের পানিতে নেমে তাকে উদ্ধার করেন সাগর নামের এক পথচারী। সাগর অচেতন দেহটি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান। পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে হাতিরঝিল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ও এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে আমাদের খবর দেওয়া হয়। তারপর আমরা হাসপাতালে গিয়ে পারুল রায় নামের এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করি।

সুরতহাল প্রতিবেদনে লিখেছেন, সারাহ রাহানুমার শরীরের কোনো অংশে দাগ বা আচড়ের চিহ্ন নেই। চুল, কপাল ও মুখ স্বাভাবিক। তবে, নাক দিয়ে তরল নির্গত হচ্ছে। হাতের আঙুলের নখগুলো নীল বর্ণের দেখা যায়।

মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সুরতহালে বলা হয়েছে, সারাহ রাহানুমার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ও উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে, এটা জানা গেছে, সারাহ অচেতন অবস্থায় হাতিরঝিল লেকের মধ্যে ভাসছিল। তার শরীরে বাহ্যিক কোনো আঘাত বা আচড় নেই। কোনো যৌন নিপীড়নের চিহ্নও পাওয়া যায়নি। ফলে, মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্তসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।

আরও পড়ুনঃ  বৃষ্টিতে গোসলের সময় বজ্রপাতে নারীর মৃত্যু

মাসুদর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে, মৃত্যুর কারণ চূড়ান্তভাবে জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢামেক মর্গে রাহানুমা সারাহর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এরপর তার পরিবার মরদেহ নিয়ে যায়। মরদেহ নেওয়ার সময় তার বড় বোন রাবিতা সারাহ বলেন, ‘আমরা মরদেহ নিয়ে মোহাম্মদপুর যাব, সেখানে জানাজা পড়াব। তারপর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করব।’

অন্যদিকে, গণমাধ্যমের খবর রাহানুমা সারাহ বিয়ে করেছেন। তবে, তার বড়বোন রাবিতা সারাহ এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন, ‘বিয়ের বিষয়ে আমি ও পরিবারের কেউ কিছু জানি না। আমার বিশ্বাস, এ তথ্য মিথ্যা। পরবর্তীতে আমরা এ ব্যাপারটা জানার চেষ্টা করে দেখব।’

মরদেহ উদ্ধার করা সাগর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমি রাত ১১টার পর গুলশানের অফিস থেকে বের হই। তবে, কাছে টাকা কম থাকায় হেঁটে হাতিরঝিলের মধ্যে দিয়ে রামপুরার মেরাদিয়ার বাসায় যাচ্ছিলাম। পরে চোখ গেল, ব্যাগের মতো কিছু একটা ভাসছিল। কাছাকাছি গিয়ে মনে হলো, মানুষ হতে পারে। কয়েকজনকে ডাকি।

কিন্তু, কেউ পানিতে নামতে চাননি। পরে আমি একা নেমে দেখি, একজন নারী ভাসছেন। তারপর চিল্লাতে থাকি, যেন মানুষ পানিতে নামেন। তখন দু-একজন নামেন। পরে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে ফরাজী হাসপাতাল নিই। কিন্তু, ওখান থেকে কেউ দেখতে চাননি। পরে ঢামেক হাসপাতালে যাই। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর সারাহ রাহানুমার সিম অন্য ফোনে লাগিয়ে তার দুলাভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানাই।

আরও পড়ুনঃ  ইসকনের বাধায় বন্ধ আমদানি-রপ্তানি!

সারাহ রাহানুমা জি-টিভির নিউজরুম এডিটর হিসেবে কাজ করতেন। এ ঘটনায় শোকে আচ্ছন্ন তার সহকর্মীরা। অনেকের প্রশ্ন, সারাহ রাহানুমা আত্মহত্যা করলে, কেন করেছেন? বা তাকে কেউ হত্যা করলেও কেন করা হয়েছে?

রাহানুমা সারাহ কল্যাণপুরে থাকতেন বলে জানা গেছে। সারাহ নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার ইসলামবাগ কৃষ্ণপুর গ্রামের বখতিয়ার শিকদারের মেয়ে। মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ফেসবুকে লেখেন, ‘জীবন্মৃত (বেঁচে থেকেও মৃতপ্রায়) হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভাল।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাহানুমা সারাহর স্বামীর নাম সায়ীদ শুভ্র। গণমাধ্যমকে শুভ্র বলেন, ‘সম্পর্কের মাধ্যমে সাত বছর আগে আমরা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করি। গতকাল সারাহ অফিসে গিয়ে রাতে আর বাসায় ফেরেনি। না ফিরে এক ব্যক্তিকে দিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিল।’

সায়ীদ শুভ্র বলেন, ‘পরে আমি তাকে ফোন করে বলি, রাতে তো তুমি বাসায় আসতে। তাহলে অন্যকে দিয়ে কেন টাকা পাঠিয়ে দিয়েছ? তখন সে ‘আমি ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন রেখে দেয়। পরে রাত তিনটার দিকে খবর পাই সে হাতিরঝিল লেকের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে। পরে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।

আরও পড়ুনঃ  ফুলবাড়িয়ায় ৫০ হাজার টাকার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি-স্ত্রী মিলে জামাইকে হত্যা

সায়ীদ শুভ্র আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াও হয়নি। তবে, বেশ কিছুদিন থেকে আমার স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চাচ্ছিলেন। ভাবছিলাম আমরা দুজনই কাজী অফিসে গিয়ে ডিভোর্স দিয়ে আসব। দেশের এই পরিস্থিতিতে আর কাজী অফিসে যাওয়া হয়নি।’

এ ব্যাপারে সায়ীদ শুভ্রের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার মানসিক অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করুন। আমি আপাতত এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। পরবর্তীতে আমি এ ব্যাপারে কথা বলব।’

এদিকে, আজ বুধবার সকালে সাংবাদিক রাহানুমার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গাজী টিভির নিউজরুম এডিটর সারাহ রাহানুমাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ঢাকার হাতিরঝিল লেক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এটি আরেকটি নৃশংস হামলা। গাজী টিভি ধর্মনিরপেক্ষ সংবাদ চ্যানেল। যার মালিক গোলাম দস্তগীর গাজী সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ