Monday, December 23, 2024

এনআইডি সংশোধনে মাঠ কর্মকর্তাদের আল্টিমেটাম

আরও পড়ুন

#যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না এনআইডি কর্মকর্তারা
#দীর্ঘদিন একই পদে থাকা কর্মকর্তাদের রদবদল করতে হবে
#এনআইডি সেবা নিয়ে জনমনে অসন্তোষ ও অভিযোগ রয়েছে
#এনআইডি সেবা সহজ ও জনকল্যাণমূলক করতে হবে
বিজ্ঞাপন

দৈনন্দিন জীবনে নানা কাজে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করতে হয় নাগরিকদের। এজন্য সব ডকুমেন্টের সঙ্গে এনআইডির তথ্যের মিল থাকা অপরিহার্য। কোনো কারণে অন্য ডকুমেন্টের সঙ্গে এনআইডির নাম, বয়সসহ সব তথ্যের মিল না থাকলে সেবা নিতে গিয়ে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত নাগরিকরা কোনো কাজে এনআইডির তথ্যের মিল না পেলে সেটি সংশোধন করতে ছুটে আসেন নির্বাচন কমিশনে। এনআইডি সংশোধনের নামে সেবা নিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। দিনের পর দিন ঘুরেও সংশোধন হয় না এনআইডি। উপজেলা, জেলা, আঞ্চলিক অফিস থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ঘুরতে হয় নাগরিকদের। ইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তদন্তের নামে হয়রানি, অযৌক্তিক কাগজপত্র চেয়ে আবেদন ফেরত পাঠানোসহ নানা অজুহাতে নাগরিকদের সংশোধন আবেদন আটকে থাকে।

তিনি আরও জানান, সর্বপ্রথম ২০০৭-০৮ সালে যখন এনআইডি করা হয়, তখন কিন্তু সব কাজে এটাকে বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়নি। যার ফলে ওই সময়ের বেশিরভাগ আবেদনে ভুল-ত্রুটি রয়েছে। এনআইডি যে জাতীয় দলিল হবে এটা সরকার বা নির্বাচন কমিশন কেউই কখনো বলেনি। এখন নাগরিকরা সেবা নিতে গেলে বিভিন্ন দপ্তর থেকে বলা হয় এনআইডি ঠিক করে আসেন। এনআইডি সংশোধন করতে এলে নির্বাচন কমিশন নিয়মনীতিতে আটকে দেয়। যেমন শুধু পাসপোর্ট বা জন্মনিবন্ধন থাকলে বা কাবিননামা বা অন্য কাগজপত্র থাকলেও সহজে এনআইডি সংশোধন করতে চান না কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুনঃ  ঈদের আগে পরিবারের কাছে ফিরতে পারবেন, আশা জিম্মি নাবিকদের

ওই কর্মকর্তা জানান, বেশিরভাগ নাগরিক বলেন, পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধন তো সরকারি ডকুমেন্ট, তাহলে কেন সংশোধন হবে না। তার মানে এনআইডি বা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা কেউ দায়িত্ব নিতে চান না। যার ফলে অনেক নিষ্পন্নযোগ্য আবেদন সংশোধন হচ্ছে না। কর্মকর্তারা একটু আন্তরিক হলে নাগরিকরা আরও সহজে সেবা পেত। এ বিষয়টি উপলব্ধি করেই নাগরিকদের হয়রানি বন্ধে ও দ্রুত সংশোধনী আবেদন নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এনআইডি সংশোধনের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ইতোমধ্যে তাগিদ দিয়েছে। সেইসঙ্গে সাত দিনের মধ্যে সালভিত্তিক সংশোধনের তালিকাও চাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ‘আরেক বিজয় আসবে’—শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান উপদেষ্টা

বিদেশগমন-জরুরি প্রয়োজনে এনআইডি কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশ
১৫ উপজেলায় সাড়ে ২৪ লাখ স্মার্টকার্ড দেবে ইসি
এনআইডি জালিয়াতি বন্ধে পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের নির্দেশ
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের মাসিক সমন্বয় সভায় এনআইডি সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এ সভায়ই এনআইডির সংশোধন আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। মাসিক সমন্বয় সভায় ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ইসি সচিব আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ এবং ৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া জনভোগান্তি দূর করতে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের যেসব আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে, সেগুলোর সালভিত্তিক তালিকা আঞ্চলিক নিবার্চন কর্মকর্তাদের প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সাত দিনের মধ্যে পাঠাতে এবং একইসঙ্গে এসব আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তাগিদ দেন সচিব বলে সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সভায় ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ এবং মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোতে কোন সালের কোন ক্যাটাগরির কতগুলো আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সরবরাহ করা ছক মোতাবেক তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে কমিশন সচিবালয়কে জানাতে হবে। দাপ্তরিক প্রয়োজনে মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোকে বেশ কিছু মোবাইল সিম দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ প্রদান করার কারণে সিমগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে না। ক্ষেত্রবিশেষে আউটসোর্সিং জনবলের মাধ্যমে সিমগুলোর অবৈধ ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ এবং মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোকে অধিকতর সচেতন হতে হবে, মনিটরিং বাড়াতে হবে এবং অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে অব্যবহৃত সিমগুলো কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফেরত আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ছয় উপদেষ্টার দপ্তর পুনর্বণ্টন

তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে অসন্তোষ ও অভিযোগ বিদ্যমান রয়েছে। তাই এনআইডি সেবা সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম আরও সহজিকরণ ও জনকল্যাণমূলক করতে হবে। যেসব কর্মকর্তা অঞ্চলভিত্তিক ক্যাটাগরি করার দায়িত্বে রয়েছেন তারাও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তাছাড়া অনেকে একই কর্মস্থলে অনেক বছর যাবত কর্মরত রয়েছেন। এসব কর্মকর্তাদের রদবদলের মাধ্যমে নতুন কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে বলে জানান সচিব।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ