তার কাছ থেকে অত্যাধুনিক দুটি বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, চারটি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে
ছাত্রকে গুলি করার ঘটনায় সিরাজগঞ্জ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। তার কাছ থেকে অস্ত্র, গুলি ও চাকু উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, রায়হান শরীফের হেফাজত থেকে সোমবার (৪ মার্চ) সেভেন পয়েন্ট ফাইভ সিক্স বোরের অত্যাধুনিক দুটি বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, চারটি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র অবৈধ বলে জানা গেছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, ওই কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক রায়হান শরীফে অস্ত্রের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। ইন্টারনেটে বিদেশি পিস্তলের ছবি দেখলেই ডাউনলোড করে রাখতেন।
সিরাজগঞ্জ ডিবির পরিদর্শক জুলহাজ উদ্দীন জানান, গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আরাফাত আমিনের বাবার করা মামলায় শিক্ষক রায়হান শরীফকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তার মোবাইল ফোন ঘেঁটে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তলের বহু ছবি পাওয়া গেছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, “শিক্ষার্থীর পায়ে গুলি করার ঘটনায় গতকালই রায়হান শরীফকে আটক করা হয়। তখন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, একটি বিদেশি পিস্তল তিনি লাখ টাকায় কিনেছিলেন। ইন্টারনেটে বিদেশি পিস্তলের ছবি দেখলেই ডাউনলোড করে রাখতেন। এরপর বিদেশি অস্ত্র কেনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। রায়হান শরীফের মুঠোফোনের হোয়াটস অ্যাপে দেখা গেছে, একজন চিকিৎসক তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি কিসের ব্যবসা করেন। জবাবে তিনি লিখেছেন, অস্ত্র কেনাবেচার ব্যবসা করেন।”
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, “রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে গতকাল রাত ১২টার পর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আরাফাত আমিনের বাবা আবদুল্লাহ আল আমিন। এই মামলায় তিনি তার ছেলেকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ এনেছেন। এছাড়া সিরাজগঞ্জ ডিবির উপপরিদর্শক আবদুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন।”
এদিকে, শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব দূর-রে-শাহওয়াজ সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ডা. রায়হান শরীফ কর্তৃক জনৈক শিক্ষার্থীকে গুলি করা সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বিস্তারিত তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নিমিত্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বর এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনকে সদস্য করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি বর্ণিত বিষয়ে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিস্তারিত তদন্তপূর্বক এ বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার বিকেলে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের শিক্ষক রায়হান শরীফ ক্লাসে মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। এ সময় তিনি আমাদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের কারও কি পোষা প্রাণী আছে? আমার একটা পোষা প্রাণী আছে।
আফিয়া নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “এরপর রায়হান তার সঙ্গে থাকা একটি কালো ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে আমাদের দেখিয়ে বলেন, এটা হচ্ছে আমার পোষা পাখি।”
তিনি আরও বলেন, “এ সময় হঠাৎ করেই পিস্তল থেকে গুলি বের হয়ে যায়। একজনের পায়ে লেগেছে, আর একজনের কানের পাশ দিয়ে গেছে।”
এ ঘটনায় আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা হুড়োহুড়ি শুরু করেন। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে তারা শিক্ষক রায়হান শরীফকে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে রায়হান শরীফকে আটক করে।
অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।