Monday, December 23, 2024

‘আমরা মরিনি, আমরা আছি’—সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী

আরও পড়ুন

সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, ‘কৌশলগত কারণেই আমাদের অন্তরালে থাকতে হয়েছে। কিন্তু, আমরা মরিনি, আমরা আছি।’ বুধবার দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

নিচে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য মোহাম্মদ আলী আরাফাতের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘‘ওরা ভেবেছিল, আমাদের শেষ করে দিবে। তথাকথিত অভ্যুত্থানের আড়ালে, (১) পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করে, (২) দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে এবং (৩) চরম বিশৃঙ্খলা তৈরী করে, আমাদের একে একে হত্যা করতে চেয়েছিল ওরা।

পরিবেশ চরম ঘোলাটে করে, কোনো বাছ-বিচার ছাড়াই আমাদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র চলছিল। এমন অস্থির সময়ে কৌশলগত কারণেই আমাদের অন্তরালে থাকতে হয়েছে। কিন্তু, আমরা মরিনি, আমরা আছি।

আগস্টের ৫ তারিখে আমরা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছি। সেই দিনই ঘাতকের দল ৪৫০টি থানায় আক্রমণ চালায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে। আহত করে আরো অগনিত পুলিশ সদস্যদের। আনসার ও বিজিবি সদস্যদের উপরও হামলা চালানো হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জেনেছি (যদিও সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি) সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় অন্তঃসত্ত্বা একজন নারী পুলিশ সদস্যকেও হত্যা করা হয়।

শুধুমাত্র ৫ আগস্টের দিনই ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সেবী, কর্মজীবী মানুষ, পথচারী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, পুলিশ সদস্য এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ১১৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। অনেক মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার পর প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় নিহতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে বলে অনুমান সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের। শিল্পী, সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদদের আক্রমণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ‘রাষ্ট্র মেরামতের ভিত্তি হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’

ছাত্রলীগ নেত্রী ইসরাত চৌধুরী দোলাকে ফেনীর বাসা থেকে তিনদিন আগে একদল দুর্বৃত্ত অপহরণ করে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে– সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দোলার মতো দেখতে এমন একটি ছবিসহ তথ্য প্রচার হলে জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়।

ধর্ষিত হয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার এমন মেয়েদের লাশ আজকাল পানিতে ভেসে আসতে দেখা যাচ্ছে। শত শত মানুষের ঘরবাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

কোটা আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই নিহত আবু সাইদসহ অন্যান্য হত্যাকান্ডকে আমরা নিন্দা জানিয়েছিলাম, দুঃখ প্রকাশ করেছিলাম, বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। আবু সাইদসহ অন্যান্য যারা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল, তাদের পারিবারের সদস্যদের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখা করেছিলেন, তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিটি হতাহতের ঘটনার তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনার ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছিল। আন্দোলনের সময় নিহত মীর মুগ্ধের বাসায় শিক্ষামন্ত্রী গিয়েছিল এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেছিল।

আরও পড়ুনঃ  ছাত্রলীগ, ২৫২ এসআই ও ১৭ বিলিয়ন ডলার লুট নিয়ে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

কোটা আন্দোলনের সময় যতগুলো দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশ সদস্যরাও ছিল। কিন্তু ঢালাওভাবে সকল মৃত্যুর দায় আমাদের সরকারের উপর দেয়া হয়েছে।

তাহলে ৫ আগস্টের পর যত নৃশংস হত্যাকান্ড হয়েছে, সেই গণহত্যার দায় কার? জুলাই থেকে আগস্টে এসেও মৃত্যুর মিছিল থামছে না কেন?

এত লাশের উপর দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থকতে চান নি বলে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এত লাশের উপর দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, তারা তো এখন ক্ষমতার অংশিদার, তাহল তারা কেন আরো লাশ ফেলছে?

শোকাবহ আগস্ট মাসে যেন আরো শোক নেমে এসেছে জাতির জীবনে। এই আগস্ট মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যগুলো কারা ভেঙে ফেললো? ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কারা আগুন দিলো? শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নয়, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাস্কর্যও ভাঙা হয়েছে। নারী জাগরণের পথিকৃত বেগম রোকেয়ার প্রতিকৃতিতে নোংরা ভাষা ব্যবহার করে কালো রং এর দাগ দিয়ে দেয়া হয়েছে। দেশ এখন আইন-শৃঙ্খলা বিহীন অবস্থায় আছে, সবকিছু চলে গেছে দুর্বৃত্তদের দখলে, যেখানে কেউই নিরাপদে নেই।

আরও পড়ুনঃ  বোরকা পরে পালান শামীম ওসমান, বিপ্লবকে নিয়ে দেশ ছাড়েন নওফেল

ইনশাল্লাহ আমরা ছিলাম, আমরা আছি, আমরা থাকবো। ৩০ লক্ষ শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা এ দেশের জনগণই রক্ষা করবে।

জুলাই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, প্রতিটি মৃত্যুর বিচার করতে হবে। প্রতিটি হত্যাকারী কে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে হবে। আমি এই সকল হত্যাকান্ডের বিচার চাই এবং সকল দায়ি ব্যক্তির সাজা চাই।

আবু সাঈদ এবং মীর মুগ্ধসহ সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এবং এই কোটা আন্দোলনে যে সকল প্রাণহানি হয়েছে সকলের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।

দেশের সকল মানুষের চাওয়া, এই সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে, সর্বোপরি সেই সকল পরিবারের জন্য যারা তাদের স্বজন হারিয়েছেন। আমি মনে করি, এ সকল মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার হওয়ার জন্য আমরা গোটা দেশ ও জাতি এ সকল পরিবারের কাছে দায়বদ্ধ।

১৫ই আগস্টের জাতীয় শোক দিবসে ৭৫-এর সেই কালো রাত্রে ঘাতকের নির্মম গুলিতে শহীদ বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ পরিবারের সকল সদস্য এবং অন্যান্য যারা সেই রাতে শহীদ হয়েছিলেন, সকলের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধ ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু’’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ